নামাজ পড়ার ফলে কপালে দাগ পরলে কি কোনো সমস্যা আছে?
নামাজ পড়ার ফলে কপালে দাগ পরলে কি কোনো সমস্যা আছে?
Share
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people’s questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people’s questions & connect with other people.
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ্ তা‘আলা সাহাবায়ে কিরামের প্রশংসা করতে গিয়ে এরশাদ করেন,
سِیْمَاھُمْ فِیْ وُجُوْھِھِمْ مِنْ اَثَرِ السُّجُوْد
অর্থাৎ ‘তাঁদের চিহ্ন তাঁদের চেহারার মধ্যে রয়েছে সাজদার চিহ্ন হতে।’(সূরা ফাতহ-২৯)
সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈগণ এ ‘সাজদার চিহ্ন’ এর ব্যাখ্যায় চারটি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যথা-
এক. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ ও ইমাম হাসান বসরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার মতে, -এটা ওই নূর যা কিয়ামত দিবসে তাদের চেহারায় সাজদার বরকতে দেখা যাবে।
দুই. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস ও ইমাম মুজাহিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার মতে, হৃদয়ের কাকুতি-মিনতি ও নম্রতা এবং সৎগুণাবলীর চিহ্নাদি যা পুণ্যবান বান্দাদের চেহারায় স্বাভাবিভাবে ফুটে ওঠে।
তিন. ইমাম হাসান বসরী ও দাহহাক রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার মতে, ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য রাত্রি জাগরণের ফলে চেহারায় যে হলদে বর্ণ প্রকাশ পায়, তাই ‘সাজদার চিহ্ন’।
চার. ইমাম সা’ঈদ ইবনে জুবাইর ও ইকরামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার মতে, ওযূর পানির সিক্ততা এবং মাটির চিহ্ন যা মাটিতে সাজদা করার দ্বারা নাক ও কপালে লেগে থাকে।
কপালে বা নাকে সাজদার দরুন দাগ পড়ে থাকলে, তা বদআকীদাধারীর চিহ্ন বলা ঠিক নয়। কারণ, ইমাম জয়নুল আবিদীন, হযরত আলী ও আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’র মত প্রখ্যাত ইমামগণের অনেকের এ প্রকার সাজদার নূরানী চিহ্ন ছিল বলে বর্ণনায় দেখা যায়। তবে কপাল বা নাকে জ্ঞসাজদার দাগঞ্চ হওয়া সম্পর্কে সঠিক বিশ্লেষণ ও অভিমত হল:
১. লৌকিকতা বশত ইচ্ছে করে এ দাগ সৃষ্টি করা হারাম ও কবীরাহ গুনাহ্। আল্লাহ্ না করুক, এ দাগ জাহান্নামে প্রবেশ করার কারণ হবে, যদি বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবাহ্ না করে।
২. যদি বেশি সাজদার কারণে এ দাগ এমনিই হয়ে থাকে ঠিক আছে আর যদি ওই সাজদা লোক-দেখানোর জন্য হয়, তবে এ দাগ জাহান্নামের চিহ্ন।
৩. যদি ওই সাজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য ছিল। কিন্তু এ দাগ পড়ার কারণে মনে মনে এ ভেবে খুশি হয় যে, এ চিহ্নের কারণে লোকেরা আমাকে ইবাদতকারী ও সাজদাকারী (নামাযী) বলে জানবে, তবে সাজদার এ চিহ্ন তার জন্য অত্যন্ত মন্দ।
৪. এ চিহ্নের কারণে উপরোক্ত কোন কিছুর প্রতি যদি তার দৃষ্টিপাত না হয় তবে তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তবে শর্ত হল, আকীদা বিশুদ্ধ হতে হবে।
সাতটি অঙ্গ বলতে আমরা সরাসরি সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিদ হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে শরীরের সাতটি হাড়; যথা- নাকসহ কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পায়ের পাতার অগ্রভাগের সাহায্যে সিজদা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কাপড়, দাড়ি ও চুল একত্রিত করে বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। -(মিশকাত: ৮৮৭)
সিজদার কারণে কপালে দাগ পড়া নেক লোকের আলামত নয়। বরং তা হচ্ছে মুখমন্ডলের নূর, হৃদয়ের উন্মুক্ততা ও প্রশস্ততা, উত্তম চরিত্র প্রভৃতি। সিজদার কারণে কপালে যে দাগ পড়ে তা অনেক সময় চামড়া নরম হওয়ার কারণে- যারা শুধু মাত্র ফরয নামায আদায় করে- তাদেরও হয়ে থাকে। অথচ অনেক লোক অধিকহারে এবং দীর্ঘ সিজদা করেও তাদের কপালে এ চিহ্ন দেখা যায় না।(ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ))
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, জাহান্নামের সে কাঁটাগুলো এ সাদানের কাঁটার মতো। হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহতায়ালাই জানেন। ওইসব কাঁটা মানুষকে তাদের আমলের অনুপাতে বিদ্ধ করবে। কিছু মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস হবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হবে, আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া হবে। কিংবা সেরকমই কিছু রাবী বলেছেন। তারপর (আল্লাহ) প্রকাশিত হবেন। তিনি বান্দাদের বিচার শেষ করে যখন আপন রহমতে কতক জাহান্নামবাসীকে বের করতে চাইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শিরক থেকে মুক্তদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ফেরেশতাদের আদেশ দেবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের ওপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদেরকে ফেরেশতারা চিনতে পারবে। সিজদার চিহ্নগুলো ছাড়া সে সব আদম সন্তানকে সারাদেহ জাহান্নামের আগুন ভস্মীভূত করে দেবে।
সিজদার চিহ্নগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নভাগ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনের পানিতে বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে। এরপর আল্লাহতায়ালা বান্দাদের বিচার কাজ শেষ করবেন। এদের মধ্য থেকে একজন বাকি থেকে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে। জাহান্নামিদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। -(সহিহ বোখারি: ৭৪৩৭)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. নামাজী ব্যক্তির কপালে, পায়ে বা হাঁটুতে নামাজ পড়ার দরুন যেই দাগ হয় তা যদি উপরে উল্লেখিত শর্তানুপাতে হয় তাহলে তার জন্য তা কিয়ামতের দিন নূর হবে ইনশাআল্লাহ। তবে উক্ত দাগ মুছে গেলে নামাজ কবুল হচ্ছে বলে মনে করা মোটেও উচিত নয়। কারণ, অনেকের তো দাগই হয় না অথচ তারা গুরুত্ব সহকারে সমস্ত নামাজ আদায় করেন। এটি নামাজ কবুল হওয়া না হওয়ার কোন মানদন্ড নয়।
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)