আমি বাংলাদেশের সমানধন্য একটা পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আমি বিনামূল্যের রক্তদান সম্বলিত একটি সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত। আমাদের সংগঠনে অনেক নারী (ছাত্রী) আছে। বিভিন্ন সময়ে কাজের ক্ষেত্রে বা রক্তের প্রয়োজনে একটা কোথাও যাওয়া বা কাজ করা বা কথা বলার প্রয়োজন হয়। ইসলাম কি এই ধরণের সামাজিক কাজের সুযোগ আছে? বা সঠিক ভাবে সংগঠন এবং ধর্ম পালনে করণীয় সমূহ জানতে পারলে উপকৃত হবো।
ধন্যবাদ
রক্তদান হ’ল কোন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬০) সুস্থ মানুষের স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়ার প্রক্রিয়া। এই দান করা রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় অথবা অংশীকরণের মাধ্যমে ঔষধে পরিণত করা হয়। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত অস্থিমজ্জা (Bon Marrow) নতুন রক্ত কণিকা তৈরীর জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদান করার দুই/তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্ত কণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ করে। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই রক্তদানকে ক্ষতিকর মনে করে। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভুল। বছরে ৩ বার রক্তদান করলে শরীরে লোহিত কণিকাগুলো প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে নতুন রক্তকণিকা তৈরীর হার বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বছরে দুইবার রক্ত দেয়। অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিবার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্ত দানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোন রোগ আছে কিনা তা বিনা খরচেই জানা যায়। যেমন- হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি ইত্যাদি।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের নিয়মিত রক্তদান করে রক্ত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলা উচিত। জনৈক কবি বলেছেন,
‘সময় তুমি হার মেনেছ রক্তদানের কাছে
দশটি মিনিট করলে খরচ একটি জীবন বাঁচে’।
উল্লিখিত পঙতি দু’টিতে কবি যথার্থ কথাই বলেছেন। রক্ত দান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, অনেক সময় এমন পরিস্থিতির ক্লু সৃষ্টি হয় মাত্র ১/২ ব্যাগ রক্ত হ’লেই আল্লাহর রহমতে রোগী বেঁচে যেতে পারে। কেননা রক্তের বিকল্প আজও কোন কিছু আবিষ্কৃত হয়নি। থ্যালাসেমিয়া রোগী, অপারেশনের রোগী, এ্যাক্সিডেন্টে রক্ত শূন্য হয়ে মৃত্যু পথযাত্রীসহ এমন সংকটময় মুহূর্তে মাত্র এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বাঁচতে পারে একটি প্রাণ। আর এ প্রাণ বাঁচানো এমনই পুণ্যময় কাজ যে, মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন একজন লোককে বাঁচানোকে সমগ্র মানব জাতিকে বাঁচানোর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন,وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا ‘আর যে ব্যক্তি কারু জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে’ (মায়েদাহ ৫/৩২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে’।[41]