আচ্ছা যখন তাজবী বা জিকির করবো তখন কি সেইটার বাংলা অর্থ কি মনে সরন রেখে পড়তে হবে প্লিজ একটু জানাবেন ?
Share
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people’s questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people’s questions & connect with other people.
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল্লাহর জিকিরের ফজিলত’ নামে একটি অধ্যায় হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে সংযোজন করেছেন। এ জিকির দ্বারা কী উদ্দেশ্য, তা বর্ণনা করে ইবনে হাজার আসকালানি বলেছেন, ‘এ জিকির হলো ওই সব শব্দ বা বাক্য, যা বললে সাওয়াব পাওয়া যায়।
এসব জিকিরের মধ্যে ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, হাসবুনাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহসহ দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনায় যে কোনো দোয়া করাই জিকিরের শামিল।
এ ছাড়াও নিয়মিত ফরজ নামাজ ও কাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জ্ঞানার্জন এবং নফল নামাজ আদায় করাকেও জিকির হিসেবে গন্য করা হয়।
জিকির শুধুমাত্র মানুষের জিহ্বার উচ্চারণের মাধ্যমেও হতে পারে। আবার জিহ্বার উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের স্মরণ বা উপলব্দি সংযুক্ত হলে তা উত্তম ও পরিপূর্ণতার জিকিরে পরিণত হবে। অন্তরের স্মরণের সঙ্গে সঙ্গে যদি জিকিরের অর্থ উপলব্দি করে মুমিন তবে তা হবে আরো উত্তম এবং ফজিলতপূর্ণ।
সুতরাং জিকির জিহ্বার দ্বারা উচ্চারণ হোক আর অন্তরের স্মরণের সঙ্গে হোক কিংবা অর্থ উপলব্দির মাধ্যমেই হোক, সব ধরনের জিকিরেই সাওয়াব পাবে মুমিন। সাওয়াব পাওয়ার জন্য অন্তরের সম্পর্ক ও অর্থের সম্পর্ক জরুরি নয়। তবে পরিপূর্ণ ও উত্তম জিকিরের জন্য এসবই প্রযোজ্য।
এ কারণেই জগৎ বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি জিকিরকে ৩ ভাগে ভাগ করেছেন।
> মুখের জিকির
কোনো চিন্তা-গবেষণা ছাড়াই জিহ্বার উচ্চারণে জিকির করা। ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, হাসবুনাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি মুখে উচ্চারণ করা।
> কলবের জিকির
আল্লাহর জাত, সিফাত (গুণাবলী), বিধানাবলী, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করার মাধ্যমে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করা।
> অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জিকির
সব সময় মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর আনুগত্যে রত থাকা বা পরিচালিত হওয়া। আর এ জন্যই নামাজকে কুরআনে জিকির বলা হয়েছে। নামাজে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর নির্দেশ পালনে জিকিরে রত থাকে।
অনেকে আবার জিকিরকে ৭ ভাগে ভাগ করেছেন। আর তাহলো-
> চোখের জিকির : আল্লাহর ভয়ে চোখ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া।
> কানের জিকির : মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর কথা শোনা।
> মুখের জিকির : আল্লাহর প্রশংসা করা।
> হাতের জিকির : দান-সাদকা ও কল্যাণকর কাজ করা।
> দেহের জিকির : আল্লাহর বিধান পালন করা।
> ক্বলবের জিকির : আল্লাহর ভয়ে ভিত হওয়া বা তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহর রহমতের আশা করা।
> আত্মার জিকির : আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদির ও ফয়সালার উপর পরিপূর্ণ রাজি ও সন্তুষ্ট থাকা।
সব যুগের ইসলামি স্কলারগণ জিকিরের বিষয়ে একমত হয়েছেন যে-
আল্লাহর জিকিরের অর্থ হলো ওই সব জিকির, যা যপ বা উচ্চারণ করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কুরআন তেলাওয়াত, নামাজ আদায়, তাসবিহ-তাহলিল, পিতামাতার জন্য দোয়াসহ কুরআন-সুন্নাহর মাসনুন দোয়া ও আল্লাহর ফরজ বিধান পালন।
এ ছাড়াও জিকিরের আলাদা আলাদা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এ সব ফজিলত বর্ণনার কারণ উঠে এসেছে-
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আমার সর্বশেষ যে কথাটি হয়েছিল, যে কথাটি বলে আমি তাঁর থেকে শেষ বিদায় নিয়েছিলাম তা হলো-
আমি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে প্রিয় আমল (কাজ) কোনটি?
তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ যে, তুমি যখন মৃত্যুবরণ করবে তখনো তোমার জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত (আদ্র) থাকবে।’ অর্থাৎ সব সময় মুমিনের মুখে আল্লাহর জিকির চলতে থাকবে।
সুতরাং মানুষের উচিত জিকিরের উল্লেখিত বিষয়গুলো প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখা। সে আলোকে জিকির করা। জিকিরে মানুষের জবান, ক্বলব ও আত্মাকে আদ্র রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় জিকেরর সঙ্গে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ ও রহমত দান করুন। আমিন।