মা যখন জীবিত ছিল তখন উনার সাথে রাগারাগি করে কথা বলতাম, এবং উনার সামনে জোরে কথা বলতাম, এখন আমি কিভাবে ক্ষমা পেতে পারি? কোরআন এবং হাদিসের আলোকে সহি ব্যাখ্যা আশা করছি।
JahidulBegginer
মা জীবিত অবস্থায় উনার সাথে রাগারাগি করে কথা বলতাম এখন তিনি মারা গেছে এখন আমি কিভাবে ক্ষমা পেতে পারি
Share
Admin
মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, অসদাচরণ করা অত্যন্ত বড় গুনাহ। আল্লাহর নবী (সা.) তিন দল লোকের কথা বলেছেন, যারা জান্নাতে যাবে না। তাদের একদল হচ্ছে, যারা মা-বাবার অবাধ্য হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই কোনো সন্দেহ নেই, এই অপরাধ বড় অপরাধ। বড় অন্যায়।
রাসূল (সা.) তিনটি কবিরা গুনাহের কথা বলেছেন, যেগুলো বড় বড় কবিরা গুনাহ। যেগুলো কঠিন কবিরা গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে একটা হচ্ছে, মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, অসদাচরণ করা, তাঁদের অবাধ্য হওয়া। এই কাজটি আসলেই অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তাই যাদের এমনটি করা হয়ে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত কোনোভাবেই তাঁদের কাছ থেকে ক্ষমা নেওয়ার সুযোগ হয়নি, তাদের করণীয় হচ্ছে দুটি।
প্রথমত, প্রতিটি অপরাধ আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেহেতু এটা আল্লাহর বিধান, তাই এখানে আল্লাহর নির্দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপরাধ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহর বান্দা যখন কোনোভাবে তার অন্তরের মধ্যে অপরাধবোধ জাগ্রত হবে, সঙ্গে সঙ্গেই সে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তওবা করা শুরু করবে। আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে কান্নাকাটি করে যদি তওবা করে, আল্লাহতায়ালা যদি সত্যিই সন্তুষ্ট হন, তাহলে আল্লাহ সব ক্ষমা করে দিতে পারেন। কারণ, তিনি তো উদার। তওবা করলে তিনি বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এ জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে আপনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তওবা করবেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এটা আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দেন। যদি আপনি সত্যিকারভাবেই অনুতপ্ত হন, সত্যিকারভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে নিজেকে পেশ করতে পারেন, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আপনার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
দ্বিতীয়ত, মা-বাবার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা, তাঁদের জন্য, তাঁদের পক্ষ থেকে বেশি বেশি করে ওই আমলগুলো বা কাজগুলো করা যে কাজগুলো কেয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মা-বাবার আমলনামায় সওয়াব হিসেবে যুক্ত করবেন বা আপনার পক্ষ থেকে তাঁদের আমলনামায় সওয়াব হিসেবে যেগুলো আল্লাহতায়ালা যুক্ত করবেন। এ ধরনের কাজগুলো তাঁদের জন্য করা। এই ভালো কাজগুলোর মধ্যে আপনি সদকা করতে পারেন, হজ, ওমরাহ করাতে পারেন, সমাজকল্যাণমূলক কাজ, মাদ্রাসা করতে পারেন। যেগুলো করলে কেয়ামতের দিন তাঁদের আমলনামার মধ্যে এর নেক আমলগুলো তাঁরা পেয়ে যাবেন। কেয়ামতের দিন যখন মা-বাবা তাঁদের আমলনামায় দেখতে পাবেন যে তাঁরা এই আমল করেননি, তাঁরা অবাক হয়ে যাবেন। এত আমল আমার কীভাবে এলো? আমি তো এত আমল করিনি। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তি জানে সে কোন আমল নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে হাজির হয়েছে। সেদিন মা-বাবা যখন দেখতে পাবেন যে আমি এত আমল করিনি, তখন আল্লাহকে জিজ্ঞেস করবেন, হে রাব্বুল আলামিন এই আমল আমার কীভাবে এলো? আমি তো এগুলো করিনি।
আল্লাহ তখন বলবেন, এগুলো তোমার সন্তানের আমল। কেয়ামতের দিন তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন । আপনার জন্য যে অসন্তুষ্টি তাঁরা দুনিয়া থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, এই নেক আমল দেখে আপনার প্রতি সেই সন্তুষ্টি এসে যাবে। তখন তারা তাদের হক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তালাশ করবে না, চাইবে না। আল্লাহর কাছে তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে না। তখন তাঁরা বলবেন, রাব্বুল আলামিন আমাদের সন্তান তো আমাদের জন্য করেছে, আমরা জানতাম না যে তারা আমাদের জন্য কিছু করেছে, কিন্তু তারা অনেক কিছু করেছে। তাদের ক্ষমা করে দিন। তারাও তখন তাঁদের সন্তানদের ক্ষমা করে দেবেন। এভাবেই আপনি আল্লাহ এবং পিতা-মাতা দুই পক্ষেরই যে হক সেটা আদায় করতে পারবেন। এ জন্য এই দুটি কাজ সুন্দরভাবে আনজাম দেওয়ার চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহতায়ালা হয়তো আপনাকেও কেয়ামতের দিন তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জনের পথ খুলে দেবেন।