জুম্মার নামাযের আগে কয়রাকাত সুন্নাত পরতে হয়? হাদিস সহ বল্লে ভালো হবে
অনেক হুজুর বলে জুম্মার আগে সুন্নত পড়তপ হবে. অনেকে বলে পড়তে হবে না। আসলে কোনটা সঠিক বুঝতে পারছি না।
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people’s questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people’s questions & connect with other people.
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
জুমার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত
জুমার নামাজের দ্বিতীয় আজানের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়াকে ‘কাবলাল জুমা’ বলে। এটি ইসলামী শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস হাদিস ও আসার তথা সাহাবা ও তাবেয়িনদের মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক কর্মধারা ) আমল দ্বারা প্রমাণিত। নিম্নে এবিষয়ে সংক্ষিপ্ত দালিলিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
জুমার পূর্বে নবীজির নামাজ
জুমার দ্বিতীয় আজানের আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক নামাজ পড়তেন এবং সাহাবাদেরকে এর প্রতি উৎসাহ দিতেন৷তবে তিনি নফল পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত খুতবার পূর্বে চার রাকাত এবং নামাজ শেষ করে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন।
আলি (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। (আল মুজামুল আওসাত,হাদিস: ১৬১৭)
উপরোক্ত সনদ বা বর্ণনার সকল বর্ণনাকারী পরিচিত, প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য। তবে কেউ কেউ মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস সাহমির উপর আপত্তি তুলার চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু তাঁর ব্যাপারে হাদিসের ইমামদের ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত হলো তিনি ছিকাহ তথা বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য৷ তাঁর বর্ণনাসমূহ পরীক্ষা করার পর ইমাম ইবনে আদি (রহ.) বলেন,‘আমার নিকট তার বর্ণনায় কোন অসুবিধা নেই। ’ (আল কামিল ৬/১৯১-১৯২)
আর হাদিসের ইমামগণ এ ধরনের মন্তব্য ওইসব রাবি সম্পর্কে করেন যাদের বর্ণনা ‘হাসান’ পর্যায়ের হয়ে থাকে। তাছাড়া ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের জীবনী সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা ‘কিতাবুস ছিকাত’ নামে প্রসিদ্ধ। সেখানেও তিনি আব্দুর রহমান আস সাহমির জীবনী উল্লেখ করেছেন। (কিতাবুস ছিকাত ৯/৭২)
মোটকথা, এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারী ছিকাহ বা বিশ্বস্ত৷ তাইতো মোল্লা আলি কারি (রহ.) সনদের বিচারে হাদিসের মান সম্পর্কে বলেন, ‘হাদিসটি জায়্যিদ তথা হাসান সূত্রে বর্ণিত। যেমনটি ইমাম জাইনুদ্দীন ইরাকি (রহ.) বলেছেন, রাসুল (সা.) জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়েছেন৷’ (মিরকাত : ২/১১২)
এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) জুমার পূর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়েছেন। (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ১২৬৭৪)
সাহাবি ও তাবেয়িনদের কর্মধারা
আবু আব্দুর রহমান আসসুলামি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস: ৫৫২৫)
হাদিসটির সনদ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। (আদ দিরায়াহ ১/১১৩)
ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, সুফিয়ান সাওরি ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মতের অনুসরণ করেছেন। (তিরমিজি,হাদিস: ৫২৩)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। আর এ চার রাকাতের মাঝে কোন সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর জুমা শেষে দুই রাকাত এবং তারপরে চার রাকাত পড়তেন। (শরহু মাআনিল আসার,হাদিস: ১৯৬৫)
হাদিসটি সহিহ৷ কারণ আলি ইবনে মাবাদ ও ফাহাদ ব্যতীত এ হাদিসের সব রাবীগণ বুখারি-মুসলিমের বর্ণনাকারী। ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার পূর্বে চার রাকাত আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা,হাদিস: ৫৪০৫)
এই আছারে ‘তাঁরা’ শব্দটি দ্বারা সাহাবায়ে কেরামই উদ্দেশ্য। কারণ, ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) মধ্যম বয়সের তাবেয়ি ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। সে যুগে কোনো আমলের দলিল দিতে গেলে সাহাবায়ে কেরামের আমলকেই পেশ করা হতো। আর এই নস দ্বারা স্পষ্ট জানা যায় সাহাবায়ে কেরাম জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন। আর ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল বা মন্তব্য ‘মারফু’ তথা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল হিসেবে ধর্তব্য।
সুতারাং উপরোক্ত মারফু, মাউকুফ, মাকতু হাদিস ও আসার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, জুমার আগে চার রাকাত নামাজ সুন্নত এবং তা রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবা ও তাবেয়িসহ সব যুগের উলামায়ে কেরামের ওপরই আমল করতেন।
কাবলাল জুমা নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদা
উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমার নামাজের আগের সুন্নত হলো সুন্নতে মুআক্কাদা। আর ইমামগণ নসের আলোকেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেছেন। কারণ নফল নামাজের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ করার অর্থ, এই নামাজ অন্তত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যেমন পরের চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
এবিষয়ে ইমাম ইবনে রজব হাম্ভলি ( রহ.) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে ইজমা আছে যে, জুমার আগে সূর্য ঢলার পর নামাজ পড়া উত্তম আমল। তবে ইমামরা এই বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে, জুমার আগের সুন্নত জোহরের আগের চার রাকাতের মতো মুয়াক্কাদা, নাকি আছরের আগের সুন্নতের মতো মুস্তাহাব?
এক্ষেত্রে অধিকাংশ ইমামদের মত হলো, জুমার আগের সুন্নত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা রাতিবা। এটি ইমাম আওজায়ি, সুফিয়ান ছাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তাঁর ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)- এর মতও এমন। (ফাতহুল বারি ৫/৫৪২-৫৪৪)
সুতরাং বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী হাদিস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত, ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহকে হাদিসে নাই বলা বা তা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়াকে সরাসরি অস্বীকার, তা চরম অন্যায় ও বিভ্রান্তকর৷
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন ৷
উত্তর : জুমু‘আর পূর্বে নির্ধারিত কোন রাক‘আত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই, বরং দুই দুই রাক‘আত করে যত ইচ্ছা পড়তে পারে (মুসলিম হা/৮৫৭)। তবে জুমু‘আর পরে দুই বা চার রাকা‘আতের কথা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ জুমু‘আর ছালাতের পর ছালাত আদায় করতে চাইলে সে যেন চার রাক‘আত আদায় করে (ছহীহ মুসলিম, হা /৮৮১)। আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) জুমু‘আর ছালাত আদায় করে ফিরে এসে নিজ বাড়িতে দু’ রাকা‘আত (সুন্নাত) ছালাত আদায় করতেন। তিনি পুনরায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাই করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৮২)। উল্লেখ্য যে, ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মসজিদে আদায় করলে চার আর বাসায় আদায় করলে দুই (যাদূল মা‘আদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১৭)।
জ্ঞাতব্য যে, ক্বাবলাল জুম‘আ চার রাক‘আত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/১১২৯)।
(ফাতাওয়া সোর্স- মাসিক আল ইখলাস, আগস্ট ২০২২)